রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

সরকার পতনে যুক্তরাষ্ট্র নয়, ভূমিকা ছিল ইউনূসের প্রভাববলয়ের- শেখ হাসিনা

বিবিসি নিউজ | প্রকাশিত: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৫৭

ছবি: সংগৃহীত

ভারতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটটিনকে দেওয়া এক বিস্তারিত সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কোনো বিদেশি শক্তি “সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত” ছিল বলে তিনি মনে করেন না। তবে অর্থনীতিবিদ হিসেবে মুহাম্মদ ইউনূস পশ্চিমা সমর্থকদের একটি শক্ত বলয় তৈরি করেছিলেন, যা শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ভুল ধারণা তৈরি করে বলে মনে করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন। জুলাইয়ের অভ্যুত্থান, সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের ভূমিকা, অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম, উগ্রপন্থি দলগুলোর উত্থান এবং ভারতের অবস্থান—সব বিষয়ে তিনি সাক্ষাৎকারে খোলামেলা কথা বলেন।

সাক্ষাৎকারের শুরুতে সাংবাদিক মনোজ গুপ্ত জানতে চান—কোনো গোয়েন্দা তথ্য বা হুমকির কারণে কি তিনি দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন? উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অগাস্টের শুরুতে উগ্রপন্থিদের নেতৃত্বে ভয়াবহ অস্থিতিশীলতায় রূপ নেয়।

তিনি বলেন,

“ষড়যন্ত্রের পুরো চিত্রটা অনেক পরে গিয়ে স্পষ্ট হয়। যখন ইউনূস সহিংস আন্দোলনকারীদের দায়মুক্তি দেন এবং আমাদের সময়কার তদন্ত বাতিল করেন, তখনই বুঝেছি—সরকার উৎখাতে বড় একটি ছক ছিল।”

শেখ হাসিনা বলেন, তাকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছিল—দেশে থাকা মানে শুধু তার নিজের নয়, বরং আশপাশের মানুষের জীবনও ঝুঁকির মুখে ফেলা।

সরকার পতনের এক সপ্তাহ পর তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের বলেছিলেন—
“সেন্ট মার্টিন আর বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে ছেড়ে দিলে আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম।”

কিন্তু এবার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন—

“মার্কিন সরকারের সঙ্গে আমাদের বরাবরই ভালো সম্পর্ক ছিল। কোনো বিদেশি শক্তি সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল বলে আমাদের বিশ্বাস করার কারণ নেই।”

তবে তিনি মনে করেন, ইউনূসের তৈরি পশ্চিমা বলয় তার অর্থনৈতিক তত্ত্বগুলোকে গণতান্ত্রিক যোগ্যতা হিসেবে ভুলভাবে ধরে নিয়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন—

“ইউনূস একজন অনির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি উপদেষ্টা পরিষদে উগ্রপন্থিদের জায়গা দিয়েছেন, সংবিধান বদলেছেন, সংখ্যালঘুদের নির্যাতনে চুপ থেকেছেন।”

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে তিনি বলেন—

“ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন, তিনি ইউনূসকে অপছন্দ করেন।”

জুলাই আন্দোলনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন—

“সেনাবাহিনী অসম্ভব পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছিল। সহিংসতা থামানো ও প্রাণহানি এড়ানো—দুটি দিক সামলানো কঠিন ছিল। বাইরের চাপ সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে কি না, আমি বলতে পারি না।”

শেখ হাসিনা বলেন—

“ভারত দীর্ঘদিনের বন্ধু। আমাকে গ্রহণ করায় ভারতীয় জনগণের প্রতি আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।”

ইউনূসের সঙ্গে দিল্লির দূরত্বের কারণ হিসেবে তিনি চরমপন্থি সমর্থন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতা ও ভারতবিরোধী বক্তব্যকে দায়ী করেছেন।

মুহাম্মদ ইউনূস কি পশ্চিমাপন্থি বেসামরিক মুখ—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন—

“তিনি গণতন্ত্র বদলের কোনো প্রতীক নন। তার বিশাল জনসমর্থন নেই। পশ্চিমারা যদি মনে করে, ইউনূস বন্ধুসুলভ ব্যক্তি—তাহলে তারা প্রতারিত হচ্ছে।”

তার মতে, ইউনূসের পেছনে উগ্রপন্থিরা কাজ করছে, যারা সাম্প্রদায়িক ও প্রতিশোধমূলক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top