জেনে নিন কেন পটকা মাছ খেলে মৃত্যু হয়
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ২১:২৪
সম্প্রতি মৌলভিবাজারের শ্রীমঙ্গলের বিষাক্ত পটকা মাছ থেকে একই পরিবারের দুইজনের মৃত্যুতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন মূলত অজ্ঞতা ও দরিদ্রতাই এর জন্য দায়ী।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপকূলীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মোস্তফা সামছুজ্জামান জানান, বাংলাদেশে সাধারণত দুইধরণের পটকা মাছ পাওয়া যায়। স্বাদুপানির পটকা ও লোনাপানির পটকা। স্বাদুপানির পটকা আকারে লোনাপানির পটকার চেয়ে অনেক ছোট। আমাদের স্বাদুপানিতে দুই প্রজাতির পটকা (Tetrodon cutcutia এবং Chelenodon patoca) পাওয়া যায়। তবে উভয় প্রজাতির পটকাই কম-বেশি বিষাক্ত।
তিনি জানান, সামুদ্রিক এই মাছটি জাপানে দামি, সুস্বাদু ও অভিজাত শ্রেণির মাছ হিসেবে পরিচিত। ইত্যমধ্যে জাপানিরা গবেষণার মাধ্যমে জেনেছে পটকার কোন প্রজাতি কোন সময় বিষাক্ত। তাদের দেশে পটকার মেন্যু তৈরির জন্য রয়েছে লাইসেন্সধারী বিশেষ শেফ। তারপরও এই মাছ খেয়ে জাপান, কোরিয়া, তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, চীন, মেক্সিকো ইত্যাদি দেশেও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। যদিও সে সংখ্যা একেবারে কম।
তিনি আরো জানান, পটকা মাছ প্রজনন মৌসুমে অধিক বিষ বহন করে। পটকার চামড়া ও গোনাডে সাধারণত অধিক বিষ থাকে। পটকা মাছের বিষাক্ততা অঙ্গ, প্রজাতি, স্থান ও ঋতুভেদে ভিন্নতর হয়।
তবে বাংলাদেশে পটকা মাছের যে প্রজাতিটি মারাত্মক বিষাক্ত জাপানে সেটা ততটা বিষাক্ত নাও হতে পারে। অনুরূপভাবে, বৈশাখ মাসে পটকা মাছটি বিষাক্ত, কার্তিক মাসে তাতে ততটা বিষ নাও থাকতে পারে। তাই অপেক্ষাকৃত কম বিষ ধারণ করা সময়ে পটকা মাছ খেয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে না, কিন্তু অজ্ঞতাবশত অধিক বিষ বহনকালে একই পটকা খেয়ে তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ড.সামছুজামান জানান, সামুদ্রিক পটকার ক্ষেত্রে (Tetrodotoxin, TTX বহনকারী) মানুষের জন্য বিষাক্ততার মাত্রা হচ্ছে প্রতি গ্রামে ১০ মাউস ইউনিট (MU, বিষাক্ততার একক) অর্থাৎ, পটকার প্রতি ১ গ্রাম অংশে যদি ১০ MU বিষ থাকে তবে তা মানুষের জন্য বিষাক্ত। একজন সুস্থ-সবল মানুষ যদি একসঙ্গে ১০ হাজার MU বিষ খেয়ে ফেলে তবে নির্ঘাত মৃত্যু।
স্বাদুপানি ও লোনাপানির পটকার বিষাক্ততার লক্ষণ রোগীর দেহে স্বাদুপানি ও লোনাপানির পটকার বিষাক্ততা এই রকম। পটকা মাছের বিষকে Neurotoxin কিংবা Sodium channel blocker বলা হয়। পটকা মাছের বিষ (TTX; m.w. 319) মানবদেহের নার্ভ সেলের Voltage-gated sodium ion channel এর সাথে শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে। ফলে হার্টে সোডিয়াম প্রবেশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এতে মানবদেহে ইলেকট্রোলইটিক্যাল ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়। বিষাক্ততায় এক ঘণ্টার মধ্যে পর্যায়ক্রমে রোগীর ঠোঁট ও জিহবায় জড়তা, মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, মুখে শুষ্কতা, মাংসপেশীতে ব্যথা ইত্যাদি নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। ৪ থেকে ৬ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাসকষ্টে মৃত্যুও হতে পারে।
তাই রোগীর প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে স্থানীয় হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে এবং চিকিৎসা নিতে হবে। পটকা মাছের বিষাক্রান্ত ধ্বংস করার জন্য কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। তাই মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে আমাদের পটকা মাছ খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
এনএফ৭১/এবিআর/২০২০
বিষয়: পটকা মাছ বিষাক্ত মাছ মৃত্যু
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।