লালমনিরহাটের কৃষি উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর আলম সফল
লালমনিরহাট প্রতিনিধি | প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১:২৫
বর্তমান সময়ে শূন্য থেকে শুরু করে প্রতিকূল পথ পেড়িয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অনেক শিক্ষিত বেকার তরুণ সফল হয়েছেন। এমন এক উদ্যোক্তা হিসেবে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি হলেন, লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের উদ্যোক্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম তাদেরই একজন।
তার বর্তমান বয়স ৪২ বছর। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নওদাবাস মৌজায় মালটা, আম, কমলা ও বড়ই বাগানের পাশাপাশি (লিচু) চাষেও সফলতা বয়ে আনছেন। এখন নিজ এলাকার তরুণদের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে উঠেছেন। অনেকেই এখন তার কাছে পরামর্শ নিতে আসেন।
তিনি গত ৭ বছরে বাগান থেকে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকারও বেশি উপার্জন করেছেন। তার সম্পূর্ণ বাগানটি রয়েছে ৩ একর ৫৬ শতাংশ জমি জুড়ে। মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম গ্রামের আলহাজ্ব আবু বক্কর সিদ্দিকের বড় ছেলে।
মধ্যবিত্ত পরিবারের ৫ ভাই-বোনের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম বড় ছেলে। সংসারের আর্থিক অনটনের কারণে খেদাবাগ একরামিয়া ফাজিল মাদরাসা থেকে ২০০৪ সালে আলিম পাশ করে চাকুরীর পিছনে সময় ব্যয় না করে তিনি কৃষি উদ্যোক্তাদের নানান প্রজেক্ট সম্পর্কে অবগত হয়ে এবং বাবার পরামর্শে শুরু করেন বিভিন্ন ফলের চাষ। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও অভিজ্ঞ কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে যেয়ে পরামর্শ ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে তার বাগানের কাজে লাগিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। চলতি মৌসুমে তিনি দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমের বাগানে মালটা,আম, কমলা ও লিচুর বিশাল বাগান রয়েছে এবং সেই বাগানে ফলের মুকুলও এসেছে। বাগানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক মজুরি খাটছেন।বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উৎসাহিত তরুণ ও চাষিরা তার বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে আম , কমলা, মালটা চাষে সার ও কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না।
জাহাঙ্গীর আলম জানায়, চাকুরীর পেছনে না ছুটে বাবার পরামর্শে আমি উদ্যোক্তা হয়েছি। বাবার পরিকল্পনা মোতাবেক নিজের চেষ্টায় আজকে বিশাল ফলের বাগান গড়ে তুলেছি।
সবার দোয়া ও ভালবাসায় প্রত্যেক মৌসুমে এ বাগান থেকে প্রায় ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকারও বেশি উপার্জন করি। তাছাড়াও বাজারে মালটা, আম ও কমলা, লিচু সহ অন্যান্য ফলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করা নিয়ে চিন্তা হয়নি আমার। আগামী মৌসুমে সব মিলিয়ে ১০ লাখ টাকার মালটা,আম, কমলা,বড়ই, লিচু সহ অন্যান্য ফল বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, আগামীতে ৫-৬ বিঘা জমিতে মাল্টা বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে তার যেটি বাস্তবায়ন করতে পারলে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অত্র এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানায়,উদ্যোক্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলমের ফলের বাগান সম্পর্কে আমরা অবগত রয়েছি। তিনি বলেন, জাহাঙ্গীর আলমের মত উদ্যোক্তাদের আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রত্যেকটি এলাকায় যদি এরকম উদ্যোক্তা তৈরি হয় তাহলে বেকারত্ব যেমন দূর হবে সেই সাথে কৃষি ক্ষেত্রেও তা সফলতা বয়ে আনবে।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইফুল আরিফিন বলেছেন, জাহাঙ্গীর আলম একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি তার বাবাকে সঙ্গে নিয়েই মূলত এই বাগান গড়ে তুলেছেন ।
তিনি সমগ্র জেলার তরুণ কৃষকদের জন্য উদাহরণ স্বরুপ। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, যে কেউ বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ করেও সফলতা অর্জন করতে পারে।এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্যও তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে যেটি ইতিবাচক কৃষির উদাহরণ বহন করে বলেও মনে করছেন এ কৃষিবিদ।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।