বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

নোয়াখালীতে যেভাবে চলছে আওয়ামী লীগ নেতার অবৈধ ইটভাটা

Nasir Uddin | প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৭:১৮

ফাইল ছবি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুরে বসতি এলাকায় মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামের একটি ইটভাটায় পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো কালো ধোঁয়ায় আশপাশের লোকজন অসুস্থ হয়ে পড়লেও প্রশাসন এবং পরিবেশ অধিদপ্তর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।

যানা গেছে ইটভাটাটি আওয়ামী লীগ নেতা ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্টুুর। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা অমান্য করে খোদ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের যোগসাজশে চলছে এ ইটভাটা।

নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ ভাটায় নিয়মিত পোড়ানো হয় কাঠ। এতে চিমনি থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আশপাশের বাসিন্দা বিশেষ করে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ অবৈধ ইটভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না নোয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য রামপুরে বসতি এলাকায় প্রায় ৩৫০টি পরিবার বসবাস করে। ওই এলাকায় বিভিন্ন গাছপালা, কৃষিজমি, চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি মসজিদ রয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন এবং ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অমান্য করে এলাকাটির প্রায় দুই একর জায়গার ওপর ২০১৭ সালে আওয়ামী লীগ নেতা ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্টু ইটভাটাটি নির্মাণ করেন।

ছিদ্দিক উল্যাহ এলাকায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার লোক হিসেবে পরিচিত।

ওই সময় অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ বন্ধে স্থানীয় বাসিন্দা ইসমত আরা রুমা, আবু নাছের, মহসিন ওরফে লাল মিয়া ও মো. সেলিম বাদী হয়ে নোয়াখালী জেলা অধিদপ্তর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাননি। এমনকি হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করেও কাদের মির্জার হুমকিতে তুলে নিতে বাধ্য হয়। গণ-অভ্যুত্থানে পট পরিবর্তনে স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম পুনরায় ২০২৫ সালে রিট পিটিশন দায়ের করলে হাইকোর্ট ১২৭৪/২০২৫ নম্বর রিট পিটিশনের ৩-৩-২০২৫ তারিখের আদেশে বামনী ব্রিকস ম্যানুংফ্যাকচারিং কোম্পানির কার্যক্রম দুই মাসের মধ্যে বিবাদীদের সম্পূর্ণ বন্ধের নির্দেশ দেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, ইট ভাটায় কৃষি জমির মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট; পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ভাটার কালো ধোঁয়ায় স্থানীয় বাসিন্দারা সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্টসহ স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যায় ভূগছেন। ভাটা এলাকার ফসলহানি থেকে শুরু করে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রে এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতা ভুট্টুর ইটভাটার কোনো পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। অবৈধ এ ইটভাটা বন্ধে ২০১৭ সালে আমি হাইকোর্টে রিট পিটিশন করি। তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জার হুমকিতে আমি ওই রিট পিটিশনটি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হই। তা না হলে মির্জা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলতেন।”

এবিষয়ে মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মালিক ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্ট বলেন, “পরিবেশ অধিদপ্তর ভাটার অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়ে বলছে, আপনারা চালান আমরা কিছু বলব না। আদালতের আদেশের বিষয়টি শুনেছি। কপি হাতে পেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”

এবিষয়ে নোয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মিহির লাল সরদার মানবজমিনকে বলেন, উনাদের অবস্থানগত ছাত্রপত্র আছে। তাদের পরিবেশগত ছাড়পত্রের আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের যে সকল সমস্যা রয়েছে এজন্য কিছু দিন আগে মেসার্স বামনী ব্রিকসকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এর আগে ভাটাটিতে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল বলে জানান মিহির।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, “অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং নামে ইট ভাটার বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top