ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে হলিস্টিক পদ্ধতি
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৩১
বিশ্বে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪০ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশে রয়েছে প্রায় ৯০ লাখ, বছরে বাড়ছে আরো এক লাখ রোগী। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রতি বছর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে অসংক্রামক ব্যাধিগুলোর মধ্যে এই রোগ প্রাধান্য বিস্তার করছে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ না নিলে বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করলে রোগী নিজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। সব বয়সের মানুষই আজ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছরই দ্বিগুণ হারে বাড়ছে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা। সচেতনতার অভাবে অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
পৃথিবী দিন দিন আধুনিকতা বা নগরায়ন বা সভ্যতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম কুফল হচ্ছে স্ট্রেস। সেই স্ট্রেসের জন্যই আজ বেড়ে চলেছে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও করোনারি আর্টারি ব্লকেজ।
প্রচলিত চিকিৎসায় নিয়ম-কানুন, যথা-শারীরিক ব্যায়াম, খাদ্যাভ্যাস এবং ওষুধ দিয়ে শুধু শারীরিক উন্নতি ঘটে। কিন্তু আধ্যাত্মিক ও মানসিক উন্নতির কোনো চেষ্টা করা হয় না এবং স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর ব্যাপারেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এজন্যই প্রচলিত চিকিৎসায় রোগীরা পুরোপুরি সুস্থ হতে পারে না।
হলিস্টিক পদ্ধতি হলো হোল বডি তথা সারা শরীরের উন্নতি; যথা- আত্মা, মন ও দেহের। আত্মা, মন ও দেহের উন্নতির মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও প্রতিকার করা সম্ভব। ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য হলিস্টিক পদ্ধতি এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
হলিস্টিক পদ্ধতি হলো আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রাচীন প্রাকৃতিক পদ্ধতির আশ্চর্য সমন্বয়। এই চিকিৎসার মূল চাবিকাঠি হলো লাইফস্টাইলে পরিবর্তন, মানসিক চাপ কমানোর কৌশল, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যাভ্যাস গ্রহণ, যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম, মেডিটেশন, নিউরোবিক জিম ও আকুপ্রেশার। মানসিক চাপই মানুষের অসুখ ও অশান্তির মূল কারণ। মানসিক চাপ কমানোর বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এক দশক ধরে হলিস্টিক হেলথকেয়ার সেন্টার হলিস্টিক চিকিৎসায় দেশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে হাজার হাজার করোনারি আর্টারি ব্লকেজ এবং উচ্চরক্তচাপসহ ডায়াবেটিক রোগীর জীবনে সুবাতাস বয়ে এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে আসছে, তেমনি অন্যদিকে দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিক রোগীদের জীবনে স্বস্তি নেমে এসেছে। বহু রোগী ইনসুলিনের মাত্রা কমিয়ে, আবার অনেকে ইনসুলিনকে বিদায় দিয়েও চমৎকার জীবনযাপন করছে।
কম খরচ এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন হলিস্টিক চিকিৎসা পদ্ধতি ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে সুবাতাস বয়ে আনবে। তাছাড়া যাদের ডায়াবেটিস নেই বা যারা প্রি-ডায়াবেটিস স্টেজে আছে, তারাও এই রোগ থেকে মুক্তির আলো পাবে। আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং সুস্থ থাকুন।
লেখক: অধ্যাপক ডা. গোবিন্দ চন্দ্র দাস। পরিচালক, হলিস্টিক হেলথকেয়ার সেন্টার, পান্থপথ, ঢাকা।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।