ভিকারুননিসার ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের আদেশ বহাল

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখায় ভর্তিকৃত প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।রোববার (১৪ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বয়সের নিয়ম না মানার অভিযোগে এই শিক্ষার্থীদের ভর্তি বাতিল করা হয়েছিল।

জানা গেছে, ভিকারুননিসায় ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে, বয়সের ঊর্ধ্বসীমা (নিজেদের নির্ধারিত) অনুসরণ না করে-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণিতে বিধিবহির্ভূতভাবে ভর্তি হয় ২০১৫ সালে জন্মগ্রহণকারী ১০ জন এবং ২০১৬ সালে জন্মগ্রহণকারী ১৫৯ জন।

এ নিয়ে মোট ১৬৯ জন শিক্ষার্থীর ভর্তি হলে, তা বাতিল চেয়ে আবেদন করেন অন্য দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক। স্কুল কর্তৃপক্ষ সাড়া না দেয়ায় তারা গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট করেন। তাদের অভিযোগ, নির্দিষ্ট বয়সের বাইরে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে স্কুলেটিতে।

২৩ জানুয়ারি হাইকোর্ট ১০ দিনের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন। পরে ২৮ ফেব্রুয়ারি ভিকারুননিসা স্কুল কর্তৃপক্ষকে এ ১৬৯ জনের ভর্তি বাতিল করতে স্কুল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই ছাত্রীদের ভর্তি বাতিল করে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

পরে ভর্তি বাতিলের বৈধতা নিয়ে ১৩৬ জন অভিভাবক আরেকটি রিট করেন। একের পর এক আদালতের সিদ্ধান্তের পর স্কুলটির প্রথম শ্রেণির ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে গত ২৬ মে দুটি লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়। ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে এ আবেদন করেন।

আজকের আদেশের বিষয়টি জানিয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, লিভ টু আপিল খারিজ করেছেন আপিল বিভাগ। ফলে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রইল। হাইকোর্টের রায় অনুসারে ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে এখন শিক্ষার্থী ভর্তিতে স্কুল কর্তৃপক্ষের আইনগত কোনো বাধা থাকল না।

এর আগে স্কুলটিতে প্রথম শ্রেণিতে ১৬৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রেখে গত ২১ মে রায় দেন হাইকোর্ট। রায়ে ১৬৯ শিক্ষার্থীর শূন্য আসনে ভর্তির নীতিমালা অনুসারে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি নিতে ভিকারুননিসা নূন স্কুল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়।

ভর্তির প্রক্রিয়া নিয়ে ভর্তি–ইচ্ছুক দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা এবং ভর্তি বাতিলের বৈধতা নিয়ে ১৩৬ শিক্ষার্থীর অভিভাবকের করা আলাদা আলাদা দুটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে এ রায় দেয়া হয়। দুই অভিভাবকের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করা হয়। ১৩৬ অভিভাবকের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে দেয়া রুল খারিজ (ডিসচার্জ) করা হয়।

হাইকোর্টের ওই রায়ের পরপরই তা স্থগিত চেয়ে ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা আলাদা আলাদা দুটি আবেদন করেন, যা ২৬ মে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে ওঠে। ওইদিন আদালত ‘নো অর্ডার’ দিয়ে আবেদনকারীপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেন।

হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর ভর্তি বাতিল হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা আলাদা আলাদা লিভ টু আপিল করেন। যা ৭ জুলাই চেম্বার আদালতে তোলা হয়। চেম্বার আদালত ওইদিন লিভ টু আপিল আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ শুনানি হলো এবং এ আদেশ আসল বলেও জানান তিনি।

আদালতে লিভ টু আপিলকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক, মুস্তাফিজুর রহমান খান ও মোহাম্মদ সাঈদ আহমেদ। আর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ রাফিউল ইসলাম।