ফিরে দেখা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির বছর ২০২২
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১ জানুয়ারী ২০২৩, ১৪:১৭
সমাপ্তি ঘটেছে আরো একটি বছরের। আজ রবিবার (১ জানুয়ারি) থেকে নতুন বছরের শুরু। আগের বছরে পাওয়া, না পাওয়া, অর্জন আর ব্যর্থতার হিসেব চলছে। একই সঙ্গে নব উদ্যমে নতুন বছর শুরু করতে বিস্তর কর্মপরিকল্পনা সাজাতে ব্যস্ত সবাই। তবে বাংলাদেশের জন্য বিদায়ী বছর ছিল আশীর্বাদ।
- বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর মতো বহু অর্জন যুক্ত হয়েছে ২০২২ সালে। পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেলের মতো বড় প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে বছরটিতে। এছাড়া নারীদের সাফ ফুটবল জয় শুধু একটি ট্রফি নয়, দেশে নারীর অগ্রযাত্রার এক প্রকৃষ্ট উদাহরণও বটে। স্বাধীনতার বহু বছর পর ২০২২ সালেই বিদ্যুৎ পৌঁছেছে দেশের সব কয়টি এলাকায়। করোনা পরিস্থিতিতে এলোমেলো হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের শ্রমবাজার ২০২২ সালে আশার আলো ফিরিয়েছে। বহু বছর বন্ধ থাকার পর চলতি বছর মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানি আবার শুরু হয়েছে। এ বছরই ভেঙেছে এক বছরে ১০ লাখ কর্মী পাঠানোর রেকর্ড। কয়েকটি দেশের সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, কিছু দেশের সুযোগ আরও বাড়ানো হয়।
প্রাপ্তির পাশাপাশি কিছু অপ্রাপ্তিও রয়েছে। টানা দুই বছর করোনার নেতিবাচক অভিঘাত কাটিয়ে ২০২২ সালের শুরুতে আর্থিক খাতের অবস্থান ছিল বেশ দৃঢ়। তবে ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সারা বিশ্বের মতো টালমাটাল করে তোলে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আমদানি ব্যয়। ভয়াবহ চাপ পড়ে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। বছরের মাঝামাঝি হুহু করে কমতে থাকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ ৪৬ বিলিয়ন ডলার থেকে নেমে বছর শেষে হয়েছে ৩৩ বিলিয়ন ডলার। রিজার্ভে টান পড়ায় সৃষ্টি হয় চরম ডলার সংকট। ৮৫ টাকার ডলার ওঠে ১২০ টাকায়। আমদানির ওপর কড়াকড়ি আরোপে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে না পারার প্রভাব পড়ে নিত্যপণ্যের বাজারে। প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ে লাগামহীন। গুজবে কান দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেন অনেক গ্রাহক, যা নতুন সংকটের জন্ম দেয়। তবে বছর শেষে এ প্রবণতা কমে আসে।
- চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোয় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ৪৯ জন ও পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়। যা ছিলো এ বছরের সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনা।
- ২০২২ সালে শোবিজ থেকে কিছু মানুষ হারিয়ে গেলেন চিরকালের মতো। না ফেরার দেশে চলে গেলেও তাদের কর্ম ও চেতনা ভক্তরা মনে রাখবে আজীবন। ২০২২ সালে যেসব তারকারা না ফেরার দেশে চলে গেছেন তারা হচ্ছেন- ঢাকাই সিনেমার বরেণ্য অভিনেত্রী শর্মিলী আহমেদ, কালজয়ী গানের সুরকার আলম খান, বাংলাদেশের গান ও চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি গাজী মাজহারুল আনোয়ার, একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনয়শিল্পী, নাট্যকার মাসুম আজিজ, বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সাবেক সভাপতি, প্রযোজক এবং পরিচালক আজিজুর রহমান বুলি, গীতিকার ও সাংবাদিক কে জি মুস্তাফা, গীতিকবি ও জ্যোতিষী কাওসার আহমেদ চৌধুরী, কণ্ঠশিল্পী আকবর।
আরও পড়ুন: দেশবাসীকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানালেন প্রধানমন্ত্রী
- ২০২২ সালে বেশ কিছু হত্যাকাণ্ড আলোচনায় আসে। সেগুলো হচ্ছে- আওয়ামী লীগ নেতা টিপু হত্যা, আওয়ামী লীগ নেতা আবু বক্কর সিদ্দিক হাবু হত্যা, চিত্রনায়িকা শিমু হত্যা, জিনের বাদশা হত্যা, বুয়েট ছাত্র ফারদিন হত্যা, আয়াত হত্যা।
- এ বছর দুটি সিনেমা হারিয়ে যাওয়া ‘হাউজফুল’ শব্দটি ফিরিয়ে আনলেও বাকিগুলো কেবল ব্যবসার পথ হাতড়েছে। বছরের শুরুতে মহামারীর খড়া কাটিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গন সচল হলেও চলছিল ঢিমেতালে। মাঝামাঝিতে এসে পরাণ নাড়া দেয় চলচ্চিত্র অঙ্গনকে, তারপর হাওয়া বইয়ে দেয় দর্শকের জোয়ার; তবে এরপর আবার ফিরে এসেছে ভাটা।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।