বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ১০ বৈশাখ ১৪৩২

শেখ হাসিনা এখনও কোনও দেশে আশ্রয় চাননি: জয়

রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৭ আগষ্ট ২০২৪, ১৭:০৬

ছবি: সংগৃহীত

ছাত্র-জনতার লাগাতার আন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যান শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে আছেন। তবে সেখানে তিনি ঠিক কোথায় আছেন, তা মঙ্গলবারও খোলাসা করেননি ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়, এ নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চলছে জল্পনা। ভারত থেকে তিনি যুক্তরাজ্যে যেতে পারেন বলে ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়। অসমর্থিত সূত্রের বরাতে তারা জানায়, সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য সরকারের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার এনডিটিভিকে বলেন, দেশের অভিবাসন আইন অনুযায়ী, কাউকে যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের অনুমতি দেওয়ার কোনও বিধান নেই। যাদের আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রয়োজন, তাদের প্রথমে নিরাপদ যে দেশে পৌঁছান, সেখানে আশ্রয় প্রার্থনা করা উচিত।

শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্যের কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়া নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, এমন সময় মঙ্গলবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়, শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল করেছে দেশটির সরকার। এ বিষয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস।

ভারত থেকে যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে না পারলে সেক্ষেত্রে শেখ হাসিনার পরবর্তী গন্তব্য কোথায়, এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার মধ্যেই তার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী সজীব ওয়াজেদ জয় বুধবার দাবি করলেন, তার মা কোনও দেশেই আশ্রয় চাননি।

সজীব ওয়াজেদ জয় এনডিটিভিকে বলেছেন, তার (শেখ হাসিনা) আশ্রয় চাওয়ার খবর সঠিক নয়। তিনি কোথাও আশ্রয়ের জন্য অনুরোধ করেননি। তাই যুক্তরাজ্য বা যুক্তরাষ্ট্র এখনো জবাব দিচ্ছে না বলে যে কথাটি বলা হচ্ছে, তা সত্য নয়। শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা বাতিল হয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের জবাবে সজীব ওয়াজেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ ধরনের কোনো আলোচনা হয়নি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারের এক দফা দাবির মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা। পরে বেলা আড়াইটার দিকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা ভারতে চলে যান। এ সময় তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানাও ছিলেন।

ডয়চেভেলের বাংলা বিভাগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, শিগগিরই মায়ের সঙ্গে দেখা করতে দিল্লিতে যাবেন তিনি। সজীব ওয়াজেদ বলেন, পদত্যাগের সিদ্ধান্ত একদিন আগে নেওয়া হয়েছিল, তবে তা তখন ঘোষণা করা হয়নি। মা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একদিন আগে।

আমরা কয়েকজন শুধুমাত্র জানতাম যে তিনি ঘোষণা দেবেন, তিনি পদত্যাগ করছেন এবং সংবিধান অনুযায়ী যাতে একটি ট্রানজিশন অব পাওয়ার হয় সেটাই ছিল ওনার প্ল্যান। তবে যখন তারা ঐ গণভবনের দিকে মার্চ করা শুরু করলো। তখন আমরা ভয়ে বললাম যে, আর সময় নেই। তোমার এখনই বেরিয়ে যেতে হবে।

আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে সজীব ওয়াজেদ জয় জানান, বর্তমানে তার রাজনীতিতে আসার কোনো পরিকল্পনা নেই। শেখ পরিবারের কোনো সদস্যরই রাজনীতিতে আসার কোনো কারণ নেই। এই মুহূর্তে শেখ পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কিংবা রাজনীতিতে আসছেন না বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয়।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনবারের মতো আমাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ক্যু হলো। তিনবারের মতো সবকিছু হারিয়ে বিদেশে থাকতে হলো। আমি আর আমার মা বাদে আমরা সবাই বিদেশে অনেকদিন ধরে আছি। আমরা এখানে সেটেলড। আমাদের এখানে জীবনের কোনো অসুবিধা নেই। আমরা এখানে থাকতে অভ্যস্ত।

সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে জয় বলেন, তিনি খুবই দুঃখিত যে দেশের জন্য ওনার বাবা জান দিয়েছেন, পুরো পরিবার জান হারিয়েছে। যেই দেশের জন্য তিনি জেল খেটেছেন, এত পরিশ্রম করেছেন, এত উন্নয়ন করেছেন, সেই দেশের মানুষ তাকে এভাবে অপমান করে বের করে দেবে, তার উপর আক্রমণ করতে যাবে, এটা আমরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি।

এদিকে রিপাবলিক বাংলা নামের এক গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে সিরিয়া বানিয়ে ফেলেছে। আমার পরিবার তিনবার চেষ্টা করেছে। শেখ হাসিনা এতো কিছু করার পরেও তাকে বাংলার মানুষ বের করে দিল, হত্যা করতে গেল। এখন বাংলাদেশে কি হবে এটা আর আমাদের পরিবারের দায়িত্ব না।

এ সময় তিনি আরও বলেন, মা বাংলাদেশ ছেড়ে যেতে চাননি। তিনি চেয়ে ছিলেন- পদত্যাগ করবেন। আমাদের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে থাকবেন। আমরা বলেছি যে না, তারা ঘোষণা দিয়েছে গণভবনে হামলা করবে। তারা তোমাকে বাঁচতে দেবে না। তাকে অনেক বুঝিয়ে হেলিকপ্টারে উঠিয়েছি। তিনি যদি ভারতে না যেতেন তবে তাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হতো।



বিষয়:


পাঠকের মন্তব্য

মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।

Top