ঝোপ বুঝে কোপ মারার ‘রণকৌশল’ নিতে চলেছে জোট ইন্ডিয়া
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ৬ জুন ২০২৪, ১৬:২০
সুযোগ বুঝেই কোপ মারার ‘রণকৌশল’ নিতে চলেছে বিরোধী জোট ইন্ডিয়া। ভারতে লোকসভা ভোটে ভালো ফল করলেও বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র সরকার গঠনের জন্য পর্যাপ্ত আসন নেই। তাই আপাতত ঐক্যবদ্ধ বিরোধী হিসেবে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। গতকাল বুধবার রাতে জোটের বৈঠকের পর তেমনই ইঙ্গিত দিলেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে। পাশে ছিলেন সনিয়া গান্ধী ও রাহুল গান্ধী।
এছাড়া, সেখানে ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার নেতা সঞ্জয় রাউত, সিপিএমের নেতা সীতারাম ইয়েচুরি ও আপ নেতা সঞ্জয় সিংহসহ জোটের অন্য দলের নেতারা।
এবারের লোকসভা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। তবে, সরকার গঠনের মতো সুযোগ তাদের হাতে রয়েছে। এনডিএর বৈঠকেও স্থির হয়েছে যে, তারা সরকার গঠনের দাবি জানাবে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে।
বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার ও অন্ধ্রপ্রদেশের ভাবী মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়ডুর সমর্থনে মোদিই প্রধানমন্ত্রী হবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী শনিবার শপথ নিতে পারেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে দায়িত্বশীল বিরোধী হিসেবেই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল ইন্ডিয়া জোট।
ইন্ডিয়া জোটের হাতে ২৩৩টি আসন রয়েছে। সরকার গড়তে ২৭২টি আসন প্রয়োজন। ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে খড়গে জানিয়েছেন, মোদির স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখবে ইন্ডিয়া। জোটের সব শরিকই এক সুরে কথা বলবে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে। এরই সঙ্গে খড়গে বলেন, সরকার গঠনের জন্য সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বৈঠকের পর জোট শরিক আইইউএমএলের নেতা পিকে কুনহালিকুট্টি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় স্বস্তিতে নেই বিজেপি। সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বিশ্লেষকদের অনেকে বর্তমান পরিস্থিতিতে ইনডিয়ার এই কৌশলকে ইতিবাচকই মনে করছেন। তাদের মতে, এখনই সরকার গঠনের জন্য তোড়জোড় করা বৃথা। কেনোনা নরেন্দ্র মোদী টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পথে এখন অনেকটাই এগিয়ে গেছেন। আর এই অবস্থায় ইনডিয়া জোট সরকার গঠনের দাবি জানালে সেটিকে ‘ক্ষমতার লোভ’ বলে প্রচারে নামতে পারে কংগ্রেস বিরোধীরা।
আর এমনটা হলে এই নির্বাচনে ইন্ডিয়া জোটের সব অর্জনের ঝলকানি ফিকে হয়ে যেতে পারে। যেসব প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন তারাও এখন চাঙা রয়েছেন। সরকার গঠনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে তাদের মনোবলও নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই তদের এই শক্তিকে কাজে লাগিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আরও বড় পরিসরে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়া হবে দলটির ভবিষ্যতের জন্য বড় একটি পুঁজি।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে একপ্রকার পুনর্জন্ম হয়েছে কংগ্রেসের। একই সঙ্গে ‘পাপ্পু’ নামের কলঙ্ক ঘুচিয়ে জাতীয় নির্ভরযোগ্য নেতা হিসেবে উত্থান হয়েছে রাহুল গান্ধীর। ভাই রাহুল গান্ধীর সমর্থনে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে আবেগঘন পোস্ট করেছেন বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী।
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে প্রিয়াঙ্কা লেখেন, ‘যে যাই বলুক না কেন নিজের জায়গায় স্থির ছিলে। সকলে সন্দেহ প্রকাশ করলেও নিজের প্রতি আস্থা হারাওনি। মিথ্যার বিরুদ্ধে সোজা হয়ে লড়াই করেছ। রাগ এবং ঘৃণাকে কখনও নিজের মধ্যে স্থান দাওনি। ভালবাসা, সত্যি এবং দয়া দিয়ে সকলের মন জয় করে নিয়েছ। তোমার বোন হিসাবে আমি গর্বিত।’
তার এই পোস্টের ইঙ্গিত থেকে বোঝা যাচ্ছে, আপাতত নিজেদের বর্তমান সাফল্যকে ধরে রেখে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে কংগ্রেস। ২০১৯ লোকসভা ভোটে যেখানে ৫২ টি আসন পেয়েছিল কংগ্রেস, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এই দল। এ নির্বাচনে ইনডিয়া জোট ২৩২টি আসনে জয়লাভ করেছে। চাঙা হয়েছে কর্মীরা। তাই সামনে করতে হবে আরও বড় কিছু। এখন শুধুই সঠিক সুযোগ ও সময়ের অপেক্ষা।
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।