টিউলিপ সিদ্দিকের ট্যাক্স ফাইল ও ব্যাংক হিসাব পেল এনবিআর, শুরু তদন্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:১২

শেখ রেহানার মেয়ে ও যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের বাংলাদেশে ট্যাক্স ফাইল ও ব্যাংক হিসাবের খোঁজ মিলেছে। বিষয়টি তদন্তে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, টিউলিপ সিদ্দিক ২০০৮-০৯ অর্থবছর থেকে ২০১৮-১৯ পর্যন্ত নিয়মিত ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এ সময় তিনি নিজেকে বাংলাদেশে ‘নিবাসী’ হিসেবে উল্লেখ করে করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত হন। নিয়ম অনুযায়ী, ‘নিবাসী’ হতে বছরে অন্তত ১৮২ দিন বাংলাদেশে অবস্থান করতে হয়। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, তিনি বাস্তবে দেশে অবস্থান করেননি এবং মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন।
বাংলাদেশে করদাতা হিসেবে নিবন্ধিত হলেও যুক্তরাজ্যে তার ট্যাক্স ফাইলে এই তথ্য গোপন করা হয়েছে। এ কারণে ব্রিটিশ আইনের অধীনেও তার বিরুদ্ধে মামলা হতে পারে।
তদন্তে জানা গেছে, টিউলিপ ২০০৭ সালের ১ জুলাই বাংলাদেশে একটি ব্যাংক হিসাব খুলেছিলেন। সেখানে প্রাথমিকভাবে জমা করা হয়েছিল ৬৫৭,৫৭৪ টাকা। ২০১৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সেই হিসাবের স্থিতি দাঁড়ায় ৩,৪৬৫,৬৫৪ টাকা। ওই হিসাবের তথ্য ব্যবহার করেই তিনি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে সরকারি প্লট নেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বেআইনিভাবে সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে টিউলিপসহ শেখ হাসিনার পরিবারের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। দুদকের আইনজীবী মোহাম্মদ সুলতান মাহমুদ জানান, টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশি পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছিলেন এবং ভোটার হিসেবেও নিবন্ধিত হয়েছিলেন।
তিনি বলেন, “তার একাধিক ঠিকানা, ভোটার তালিকায় নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট—সব নথি আমরা আদালতে দাখিল করব।”
অন্যদিকে, টিউলিপ সিদ্দিক এ অভিযোগকে ‘হয়রানি ও প্রহসন’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, তার কোনোদিন বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র বা ভোটার আইডি ছিল না। শিশু বয়সের পর থেকে তিনি কোনো বাংলাদেশি পাসপোর্টও নেননি।
উল্লেখ্য, গত জানুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন টিউলিপ। যুক্তরাজ্যের আর্থিক খাতে দুর্নীতি দমন তদারকি করছিলেন তিনি। পরে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে শেখ হাসিনা-সংশ্লিষ্ট সম্পদ থেকে সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর রাজনৈতিক চাপের মুখে তিনি পদত্যাগ করেন।
বর্তমানে এনবিআর ও দুদকের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের আদালত ও ব্রিটিশ আইনের অধীনেও আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন বলে জানা গেছে।
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।