২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যত মামলা
রায়হান রাজীব | প্রকাশিত: ২১ আগষ্ট ২০২৪, ১৯:০৪
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তার বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর মধ্যে ছয়টির বিচার শেষে সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। আর কিছু মামলা স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। তবে, লন্ডনে থাকা তারেক রহমান কোনো মামলাতেই সাজা ভোগ করেননি। আদালত তাকে পলাতক হিসেবে দেখিয়ে এসব রায় দিয়েছে।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দাবি, রাজনৈতিকভাবে এসব মিথ্যা মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো হয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ১৭টি মামলা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনার সরকারের সময়ে ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, অর্থপাচার মামলা ও সারাদেশব্যাপী মানহানির মামলাসহ আরও অন্তত বিশটির বেশি মামলা হয় বলে জানান বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা। তবে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রকৃত মামলার সংখ্যা কত, তা জানেন না তারা।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সমাবেশ চলার সময় গ্রেনেড হামলা হয়। ওই হামলায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এবং শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা অল্পের জন্য বেঁচে গেলেও ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় অন্তত ৪০০ নেতাকর্মী আহত হন। ২০১৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এ মামলায় রায় দেন ঢাকার বিচারিক আদালত। ৫২ জন আসামির মধ্যে তিন জনের অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় বাকি ৪৯ জনের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়। এ মামলায় ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় এবং ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। তারেক রহমানকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা: ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলায় অভিযোগ ছিল, এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া ২ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি অর্থ ট্রাস্টের কাজে ব্যবহার করা হয়নি। বরং সেই টাকা নিজেদের হিসাবে জমা রাখার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এ মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত।
একইসঙ্গে তারেক রহমানসহ অন্য পাঁচ আসামিকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হাইকোর্ট পরে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। এই মামলায় খালেদা জিয়া দুই বছর কারাভোগ করেন। ২০২০ সালে শর্তসাপেক্ষে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। গশেখ হাসিনা সরকার পতনের পর রাষ্ট্রপতির আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলায় তারেক রহমানকে ২০০৮ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মুক্তি পেয়ে লন্ডন চলে যান তিনি।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের মামলায় কারাদণ্ড: ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান, তার স্ত্রী জুবাইদা রহমান ও জুবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল বানুর বিরুদ্ধে মামলাটি করেছিল দুদক। দাতের অভিযোগ, তারেক রহমান ও তার স্ত্রীর ঘোষিত আয়ের বাইরেও ৪ কোটি ৮০ লাখ টাকারও বেশি পরিমাণ অর্থের অবৈধ সম্পদ রয়েছে। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এ মামলায় তারেক রহমানকে নয় বছরের এবং তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
অর্থপাচার মামলা: ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের একটি মামলায় ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে খালাস দেন। ওই মামলায় তারেকের বন্ধু ও ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিচারিক আদালতের ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করে দুদক। ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতের খালাসের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি তাকে ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেন।
মানহানির মামলায় দণ্ড: ২০১৪ সালে লন্ডনে এক সমাবেশে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘রাজাকার’ ও ‘পাকবন্ধু’ উল্লেখ করে তারেক রহমান নানা অবমাননাকর কটূক্তি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগ এনে সে সময় নড়াইলে তার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান বিশ্বাস। ওই মামলায় ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তারেক রহমানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন নড়াইলের আদালত। অন্যদিকে, শুধুমাত্র ঢাকার আদালতেই মানহানির অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তা ছাড়া একই অভিযোগে সে সময় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সারাদেশে অসংখ্য মামলা করা হয়।
রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা: তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলাও রয়েছে। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারি তেজগাঁও থানায় করা রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় তারেক রহমান ও একুশে টেলিভিশনের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুস সালামের বিরুদ্ধে যোগসাজশ করে মিথ্যা, বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।
নোয়াখালীতেও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে আরেকটি মামলা আছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। ওই মামলাতেও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলাও রয়েছে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ২ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে মামলা করেন জননেত্রী পরিষদের সভাপতি এ বি সিদ্দিকী। তারেক রহমানের মামলার বিষয়ে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল বলেন, ‘আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল তারেক রহমান। তাই আইনি প্রক্রিয়াতেই মামলাগুলো মোকাবিলা করবেন।’ সূত্র: বিবিসি বাংলা
বিষয়:
পাঠকের মন্তব্য
মন্তব্য পাঠকের একান্ত ব্যক্তিগত। এর জন্য সম্পাদক দায়ী নন।